পৌরসভা পরিচিতি
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার। পাহাড়ের পাদদেশ এবং সমুদ্রের নয়নাভিরাম তীরঘেঁষে কক্সবাজার পৌরসভা অবস্থিত। এর দক্ষিণে যেমন রয়েছে পাহাড়, তেমনি উত্তরে বাঁকখালী নদী ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, নদী, পাহাড় এবং সমুদ্র। এই তিন ধরনের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে সুশোভিত কক্সবাজার পৌরসভা পর্যটকদের জন্য কক্সবাজার তাই একটি মনোমুগ্ধকর স্থান। এখানে পাহাড়ের চূঁড়ায় দাঁড়িয়ে যেমন সুর্যোদয় দেখা যায়, সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে তেমনি সুর্যাস্ত দেখা যায়। বাঁকখালী নদীতে জ্যোৎস্না রাতে নৌকা ভ্রমণও অনেক আনন্দের। তাই দেশের পর্যটক ও বিদেশী পর্যকদের জন্যও কক্সবাজার একটি বিনোদনের প্রিয় স্থান। কক্সবাজারের এই সৌন্দর্যবর্ধন ও অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কক্সবাজার পৌরসভা। কক্সবাজার মিউনিসিপালিটি গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। জনাব মেহের আলী বি.এল কক্সবাজার মিউনিসিপালিটির প্রথম মনোনীত চেয়ারম্যান ছিলেন এবং তিনি রামু উপজেলার অধিবাসী ছিলেন। ১৯৫৯ সালে কক্সবাজার মিউনিসিপালিটির নাম পরিবর্তন করে “টাউন কমিটি” করা হয়। টাউন কমিটির প্রথম মনোনীত চেয়ারম্যান ছিলেন জনাব আবদুস সালাম। তিনি কক্সবাজার পৌর এলাকার বাহারছড়ার বাসিন্দা ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে কক্সবাজার পৌরসভার টাউন কমিটির নাম পরিবর্তন করে “পৌরসভা” করা হয়।
পর্যটকদের জন্য যত আকর্ষণীয় স্থান, বেশীরভাগ কক্সবাজার পৌরসভাধীন অথবা কক্সবাজার পৌরসভার অদূরেই। সমুদ্র, রাডার, বৌদ্ধমন্দির, ঝাউবীথি, দরিয়ানগর সবই কক্সবাজার পৌরসভার সীমানার মধ্যে এবং হিমছড়ি, ইনানী, পেচাঁরদ্বীপ ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দির পৌরসভা হতে খুব বেশী দূরে নয়।
কক্সবাজার পর্যটন রাজধানী হিসাবে যেন সারা বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করে। এখানে যেমন রয়েছে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা, তেমনি রয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ, তিন ধরনের উপজাতি ও কিছু সংখ্যক খ্রিস্টান। সবার মধ্যেই রয়েছে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও সহানুভূতিশীল মনোভাব। এখানকার মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। বড় কোন ধরনের রাজনৈতিক সংঘাত বা মৌলবাদী কোন সংগঠনের তৎপরতা বা কোন বিশেষ গোষ্ঠীর সন্ত্রাস এখানে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। এখানে রয়েছে মানুষের পেশাগত বৈচিত্র। বেশীরভাগ মানুষ চাকুরীজীবি ও ব্যবসায়ী। একটি বৃহৎ অংশ মাছ ধরা ও মৎস্য ব্যবসার সাথে জড়িত।
এখানে শীত মৌসুমে পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকে। তখন প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটকদের আগমন ঘটে। অন্যান্য ঋতুতেও পর্যটকের আগমন নেহায়েত কম নয়। দৈনিক কমপক্ষে ৪০-৫০ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। তাই শহর পরিস্কার রাখা পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। সারাবছর বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমনের কারণে কক্সবাজার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অন্যান্য যে কোন জেলার চেয়ে বেশী। তাই জীবনযাপনের খরচ মেটাতে পৌরবাসীকে হিমশিম খেতে হয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ভৌগোলিক কারণেই কক্সবাজারে কাব্যচর্চা-কাব্যপ্রেম বেশী দেখা যায়। তাই কক্সবাজার পৌরসভার অর্থায়নে সমুদ্রের তীর ঘেঁষে ঝাউবীথি তলে নির্মিত হয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার অর্থায়নে দরিয়ানগর কবিতা চত্বর। স্বনামধন্য দেশীয় ও প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের কবিদের সমন্বয়ে ২০১১ ও ২০১২ সালে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা কক্সবাজারের সংস্কৃত অঙ্গনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়াও সমুদ্রের বেলাভূমিতে প্রতিবছরই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বীচ ক্রিকেট, বীচ ফুটবল, বীচ ভলিবল ও ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রথম সার্ফিং ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় কক্সবাজারে। দেশী ও বিদেশী সার্ফারদের নিয়ে প্রতিবছর সার্ফিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। জাতীয় দিবসসমূহে বিভিন্ন দেশীয় কোম্পানীর উদ্যোগে সমুদ্র সৈকতে কনসার্টের আয়োজন করা হয়। থার্টি ফার্স্ট নাইটে এখানে পর্যটকদের ঢল নামে। ২০১১ সালে মহিলা সাফ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয় কক্সবাজারের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে।
কক্সবাজার রাখাইন পল্লীগুলোতে বৈশাখ মাসে প্রতিবছরই জলকেলি উৎসব (রাখাইন সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের একে অপরকে পানি ছোড়ার একটি বিশেষ খেলা) হয়। রাখাইন গান ও নৃত্যে মুখরিত হয় রাখাইন পল্লী। শহরের বাজারঘাটা ও টেকপাড়া এলাকায় রয়েছে বার্মিজ মার্কেট। বার্মিজ মার্কেটসমূহে রাখাইন তরুণীদের সেলসম্যান হিসাবে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যেভাবে সারাদেশে উন্নয়ন করে যাচ্ছেন; তারই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনায় বর্তমান মেয়র জনাব মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে কক্সবাজার পৌরসভায় বাংলাদেশ সরকার ও বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তা, ড্রেনেজ ও লাইটিং ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। যারফলে পৌরসভা একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরীতে রূপ নিয়েছে।
এছাড়াও কক্সবাজারে পৌর এলাকায় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। যা দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে কক্সবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০২৩ সালের মধ্যে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে রেললাইন চালু হতে যাচ্ছে।
পৌর শহর সমুদ্র তীববর্তী হওয়ায় সমুদ্রের সাথে যেনো এখানকার মানুষের সখ্যতা রয়েছে। যা মাঝে মাঝে হাসি-খুশি আবার রাগ-অভিমানের মত আচরণ দেখায়। সামুদ্রিক নিম্নচাপের কারণে কক্সবাজারে প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড়ের আশংকা থাকে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশংকা নিয়েও এখানকার মানুষ সংগ্রাম করে বেঁচে আছে এবং সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখে আসছে।